সভ্যতা বনাম মনুষ্যত্ব
মানুষেরা হাড়িয়ে যাচ্ছে।দুটি হাত দুটি পা নিয়ে জন্মালেই মানুষ হওয়া যায় না ছোট থেকে এটাই শুনেছিলাম, পড়েছিলামও বইয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা যে পুর্বের দুই লাইন অনেকের মুখের কৌতুকের মতো হাসি ফুটানোর জন্য যথেষ্ট। আর এটাই বাস্তবতা।
আমরা সভ্য হয়েছি। আজ আমরা জানি চায়ের দোকানে যেভাবে কথা বলা সম্ভব ৫ স্টার রেস্টুরেন্টে সেভাবে কথা বলা যায় না। সভ্যতাইতো আমাদেরকে টিপা ফোনের থেকে তুলে এনে স্মার্টফোনে উন্নিত করেছে। আরো কত কিছুই আমরা পেয়েছি এই সভ্যতার বিকাশে। কিন্তু এই সভ্যতার নামে যখন মানুষের মনুষত্যের খুন হয় তখন সেটার দায় কেউ নিতে চায় না।
কেউ বিশ্বাস করেন বা না করেন নিউটনের তৃতীয় সুত্রের মতে- "প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে" । আর এই বিষয়টা বাস্তব জীবনেও ঠিক একই ভাবে বর্তায়। সভ্যতার ভালো দিকগুলো আমাদের চোখের সামনে থাকে বলে সেগুলোকে আমরা অনেক স্পষ্ট দেখি। আমরা দেখি না আরালে তিলে তিলে মনুষত্যের ক্ষয়। সভ্যতার বিকাশে এখন দরকার দক্ষ মানুষ এখানে ভালো মানুষের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। হয়তো তাই সবাই দক্ষ হতে ব্যস্ত, কেউ নিজের মুল্যবান সময় নস্ট করে কেনইবা ভালো মানুষ হতে যাবে! ভালো মানুষ হয়ে কিবা পাওয়া যায়!! ভালো ব্যাংক ব্যাল্যান্স এর নিসচয়তাই তো এখানে নেই।
কিছু কথা আমার মনে প্রায় উকি দেয়। ( কথা গুলো অনেকের মনে আঘাত করতে পারে তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি )
- আমরা অনেকেই অনেক টাকা অপচয় করি। সেই টাকা কোন ছোট্ট শিশুর মুখে কতটা হাসি ফুটাতে পারে এটা ভাবার সময় আমাদের কাছে নেই। কারন আমরা সভ্য, হয়তো একটু বেশিই সভ্য।
- আমাদের রেস্টুরেন্টের কর্মচারিদেরকে ৫০ টাকা টিপস দিতে হাত কাপে না, কিন্তু রিকশাচালকের সাথে ৫ টাকা নিয়ে ঝগড়া করতে আমাদের বাধে না। কারন আমরা সভ্য, হয়তো একটু বেশিই সভ্য।
- আমরা দশজন বড়লোককে অনায়াসে খাওয়াতে পারি কিন্তু একজন গরিবের মুখে খাবার তুলে দিতে আমাদের বিবেকে বাধে। কারন আমরা সভ্য, হয়তো একটু বেশিই সভ্য।
এবার আসা যাক সভ্যতার কিছু দান সম্পর্কিত আলোচনায়। অলসতা এই সভ্যতার অনেক বড় দান। এই দানের আধুনিক নাম হলো শর্টকাট। এখন মানুষ সব কিছুতে শর্টকাট খুজে। তাই এখন সবকিছুর শর্টকাটও পাওয়া যায়। এটার চাহিদা এতোই বেশি যে পরীক্ষা না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিরও শর্টকাট আছে।পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাবারও শর্টকাট আছে। চাকরির ক্ষেত্রে আপনি পাবেন রেফারেন্স নামের শর্টকাট। যেকোন কাজ স্বল্প সময়ে করানোর জন্য ঘুষ নামের শর্টকাটের কোন বিকল্প নেই। আরো কতশত শর্টকাট আছে বর্তমানে তা ভাষায় হয়ত শেষ করা যাবে না। এই শর্টকাটগুলো আর যাই হোক আমাদের মানুষ বানায় না বরং খুন করে আমাদের মনুষ্যত্বকে। কেননা যে ঘুষ দিয়ে চাকরি পাবে সে নিজে ঘুষ খাববকে, এটার কোন নিশ্চয়তা আছে!
সভ্যতার নামে মনুষ্যত্ব হাড়িয়ে না যাক আর এই পৃথিবী কিছু ভালো মানুষ পাক এটাই কাম্য।